সোমবার, ৪ নভেম্বর ২০২৪
২০ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলায় ব্যাপক লোডশেডিং : কাজকর্ম বিঘ্নিত, জনমনে ক্ষোভ

অনলাইন ডেস্ক | আপডেট: শুক্রবার, নভেম্বর ১, ২০২৪

দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলায় ব্যাপক লোডশেডিং : কাজকর্ম বিঘ্নিত, জনমনে ক্ষোভ
খুলনাসহ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলায় লোডশেডিং শুরু হয়েছে। ফলে গরমে মানুষ অতিষ্ঠ এবং বিদ্যুৎ নির্ভর সব কাজকর্ম বিঘিœত হচ্ছে। বিশেষ করে শিল্প কারখানায় উৎপাদন বিঘ্নিত হচ্ছে। লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ হয়ে খুলনার অনেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের মন্তব্য করছেন। শহরের তুলনায় গ্রামে লোডশেডিং আরও বেশি।
খুলনা বিভাগের ১০ জেলা, বরিশাল বিভাগের ৩ জেলা ও বৃহত্তর ফরিদপুরের ৫ জেলাসহ মোট ২১ জেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহের দায়িত্বে রয়েছে ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ওজোপাডিকো)। 
সংস্থাটির নগরীর বয়রা এলাকার প্রধান কার্যালয় থেকে জানা গেছে, এ ২১ জেলায় বিদ্যুতের গ্রাহক রয়েছে প্রায় ১৪ লাখ ২৮ হাজার। এরমধ্যে শুধুমাত্র খুলনায় গ্রাহক আছে প্রায় ২ লাখ ৪৫ হাজার।
২১ জেলায় ওজোপাডিকো’র আওতাধীন এলাকায় বৃহস্পতিবার দুপুর ১টায় বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ৬৫৯ মেগাওয়াট। এর বিপরীতে সরবরাহ ছিল ৫৬০ মেগাওয়াট, অর্থাৎ লোডশেডিং ছিল ৯৯ মেগাওয়াট। এর মধ্যে শুধুমাত্র খুলনাতেই লোডশেডিং ছিল ৪৫ মেগাওয়াট। এছাড়া বরিশালে ১১ মেগাওয়াট, গোপালগঞ্জে ৫, নড়াইলে ২, মাগুরায় ৩, সাতক্ষীরায় ২, কুষ্টিয়ায় ৬, চুয়াডাঙ্গায় ৫, ফরিদপুরে ৬, রাজবাড়িতে ৪, মাদারীপুরে ৪, শরীয়তপুরে ২ ও ঝালকাঠিতে ৪ মেগাওয়াট লোডশেডিং ছিল।
নগরীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মার্কেটের দোকানি ইয়াকুব আলী বলেন, ২ দিন ধরে দিন-রাতে সমানে লোডশেডিং হচ্ছে। লোডশেডিংয়ের সময় বেচাকেনা বিঘ্নিত হয়।
নগরীর লোয়ার যশোর রোডের ফটোস্ট্যাট দোকানি কামরুল হাসান বলেন, ২ দিন ধরে লোডশেডিং চলছে। লোডশেডিংয়ের সময় কম্পিউটারের কাজ এবং ফটোকপি করতে পারছি না।
নগরীর মৌলভীপাড়ার বাসিন্দা কলেজছাত্র ইমন শেখ বলেন, খুলনায় আবার লোডশেডিং শুরু হয়েছে। লোডশেডিংয়ের সময় গরমে লেখাপড়া বিঘিœত হচ্ছে। অনেক দিন মোমবাতি কেনা লাগতো না, এখন আবার কিনতে হচ্ছে।
দাকোপ উপজেলার গুনারি গ্রামের সাব্বির হেসেন বলেন, রাত-দিন ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ৭ বা ৮ বার বিদ্যুৎ চলে যাচ্ছে। প্রচণ্ড গরমেও ফ্যান চালানো যাচ্ছে না। বিদ্যুৎ যাওয়ার পর এক ঘণ্টার মধ্যে আসে না।
ডুমুরিয়া উপজেলা সদরের কলেজছাত্র দিদারুল আলম বলেন, ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে।



বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুডস এক্সপোর্টার্স এসোসিয়েশনের পরিচালক হুমায়ুন কবীর বলেন, লোডশেডিং হলে হিমায়িত চিংড়ি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর কোল্ড স্টোরেজে তাপমাত্রা ঠিক রাখতে গিয়ে চরম বিপাকে পড়তে হচ্ছে। লোডশেডিং চলাকালে জেনারেটর চালিয়ে রাখতে বাড়তি ব্যয় হয়।



এ ব্যাপারে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওজোপাডিকো’র একজন কর্মকর্তা বলেন, কয়েকটি বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ রাখায় বিদ্যুৎ উৎপাদন কমেছে। সে কারণে ঘাটতিপূরণে লোডশেডিং করতে বাধ্য হচ্ছেন। এটা শুধু খুলনা অঞ্চলে নয়, আরও অনেক জেলায় হচ্ছে।


জনমনে ব্যাপক ক্ষোভ : মহানগরীসহ ওজোপাডিকো’র আওতাধীন পার্শ্ববর্তী জেলাসমূহে ঘন্টায় ঘন্টায় ব্যাপক লোডশেডিং এ জনগণের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। বিগত তিনদিন ধরে চলমান লোডশেডিং-য়ে শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষের স্বাভাবিক জীবন-যাপন ব্যাহত হচ্ছে। কেন এরকম লোডশেডিং হচ্ছে এবং কতদিন ধরে চলবে এ বিষয়ে জনগণ কোন ধারণা না পেয়ে তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করছে। অথচ ওজোপাডিকো কর্তৃপক্ষও এ বিষয়ে কোন বিবৃতি দিচ্ছে না বা জনগণকে অবহিত করছে না। ফলে জনগণ ধারণা করছে, এ ধরনের লোডশেডিং ছাত্র জনতার আন্দোলনকে নস্যাৎ করতে বিদ্যুৎ সেক্টরে ঘাপটি মেরে থাকা স্বার্থান্বেষী মহলের গভীর কারসাজি। 
দক্ষিণ অঞ্চল উন্নয়ন পরিষদের নেতৃবৃন্দ এ বিষয়ে সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা ও লোড ম্যানেজমেন্ট-এর মাধ্যমে লোডশেডিং হ্রাসের দাবি জানিয়েছেন। 
বিবৃতিদাতারা হলেন পরিষদের প্রধান সমন্বয়কারী বীর মুক্তিযোদ্ধা এড. আব্দুল মালেক, সভাপতি শেখ মুহাম্মদ সাহেব আলি, মহাসচিব রোটারিয়ান ইঞ্জিনিয়ার রুহুল আমিন হাওলাদার, পরিষদের নেতা এস এম আকবর হোসেন, আফরোজা আক্তার মঞ্জু, এড. শহিদুল ইসলাম, হুমায়ুন কবীর খান, সরদার আবু তাহের, সাংবাদিক এস এম রাসেল আমিন প্রমুখ।  
0 Comments